প্রিয়া আমার প্রিয়া ; কিছু পাতা অধ্যয় ৫

প্রিয়া আমার প্রিয়া:

আমি একটা বুদ্ধি বের করলাম। যেমন বুদ্ধি করলাম তেমন কাজ শুরু করে দিলাম। আমিও একটা রিকশা ডাকতে লাগলাম,
: এই রিকশা যাবে?
এটুকু বলতেই পিছে ফিরে তাকাল ওরা। এবার ইয়াসমিন জিজ্ঞাসা করলো কি মেনাফা চলে যাচ্ছ নাকি?
: হ্যাঁ। কেন? কোন দরকার আছে?
: না, মানে তুমি ….
: আচ্ছা যাই। কালকে দেখা হবে। বাই।
আমি রিকশায় উঠলাম রিকশা নিয়ে ওদের সামনে দিয়ে ক্রিং ক্রিং করতে করতে চলে এলাম।
মুহুর্তের মধ্যে প্রিয়ার মুখের হাসি যেন শেষ, হা করে তাকিয়ে আছে। আমি রিকশা নিয়ে কিছু দূর চলে এলাম। এবার রিকশা থেকে নেমে গেলাম। একটা দোকানের ভিতরে ঢুকে লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের দেখছি, ওরা এদিকেই আসছে। প্রিয়া একদম চুপ কোন হাসি নেই মুখে। ইয়াসমিন কিছুক্ষণ পর পর কিছু একটা কিছু বলছে। হাটতে হাটতে ওরা একেবারে কাছে এসে পরেছে। আমি লুকিয়ে পরলাম। আমার সামনে চলে গেছে ওরা। আমি পিছ থেকে ওদের ঋড়ষষড়ি করা শুরু করলাম। সুযোগ খুজছি কখন রাস্তাটা একটু ফাকা হবে।
হ্যাঁ এইটাই সুযোগ, ইয়াসমিন দোকানে কি যেন কিনতে গেছে আর প্রিয়া একা দাড়িয়ে আছে, রাস্তাটাও মোটামুটি ফাকা আছে। আমি প্রিয়ার পিছ দিয়ে হেটে ওর কাছে যাচ্ছি। একদম কাছে চলে এসেছি, এবার বুক ভরা সাহস নিয়ে, ওর হাতটা ধরে ফেললাম। প্রিয়াতো চমকে উঠে পিছনে তাকালো??? আমার চোথের চোখের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শত শত না বলা কথা শুনতে পাচ্ছি, না দেখা স্বপ্ন পাচ্ছি, ঐ দূর আকাশটা দেখতে পাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর ইয়াসমিন দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে হাজির, ইয়াসমিন বলতে শুরু করলো,
: আরে মেনাফা তুমি?
যেন আকাশ থেকে পরেছ, এতক্ষণে আমার হুশ ফিরে এসেছে। প্রিয়াও বলে উঠলো।
: হাত ছাড়, তুমি… আপনি হাত ছাড়েন।
আমি হাতটা ছেড়ে বললাম: প্রিয়া আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
: আমি তো শুনতে চাই না।
: কিন্তু তোমাকে তো শুনতেই হবে, কারণ তুমি আমাকে ভালবাস।
: আমি ভালবাসি? আমি তোমাকে ভালবাসি না (মুখ শক্ত করে বলল)।
: তাই নাকি তাহলে কি আর করা।

আমি, প্রিয়া এবং ইয়াসমিন হাটতে শুরু করলাম, ইয়াসমিন আমাদের মাঝে আর প্রিয়া রাস্তার ডানে আর আমি বাম পাশ দিয়ে হাটছি। সবাই চুপ এরমধ্যে ইয়াসমিন নিরবতা ভেঙ্গে বকলতে শুরু করলো: আচ্ছা মেনাফা, তুমি কি বলতে চাও প্রিয়াকে?
আমি বললাম: কথাটা এ রাস্তার মধ্যেতো আর বলা যাবে না, চলো পার্কে গিয়ে বসি। তারপর বলি।
এরমধ্যে প্রিয়া বলতে শুরু করলো: আমার সময় নাই, তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। এমন ভাবে বলছে যেন ওর কথাটা এখুনি শুনতে হবে।

হাটতে হাটতে পার্কে এসে পরেছি, ইয়াসমিনকে এক পাশে দিয়ে আমি প্রিয়ার পাশে হাটছি। ইয়াসমিন বলতে শুরু করলো: কি ব্যাপার বলো না কেন? তাড়াতাড়ি বলো।
আমি চুপ করে হাটছি আর ভাবছি কি ভাবে বলা যায়, আবার ইয়াসমিন বলতে শুরু করলো মেনাফা কি ব্যাপার? আমি চুপ করে আছি, প্রিয়াও চুপ করে অপেক্ষা করছে কখন আমি বলব“ আমি তোমাকে ভালবাসি” আমি বুঝতে পারছি ওর মনের মধ্যে লুকানো কথাটা, তারপরও চুপ করে আছি, ভাবছি কি বলা যায়, কি ভাবে বলা যায়, আরও কিছুক্ষণ চুপ চাপ হাটছি, হাটার শব্দটাই কেমন যেন কথা বলছে, কি যেন বলতে চাইছে।

হাটতে হাটতে আমরা লেকে জাহাজ বাড়ি বা লাল মিনারওআলা বাড়িটার সামনে চলে এসেছি, এ জায়গাটা খুব নীরব আশে-পাশে কোন মানুষ চোখে পরছে না, এইতো সুযোগ।
একপা দুপা, এগিয়ে গিয়ে প্রিয়ার পথ আটকালাম, প্রিয়ার মুখোমুখি দাড়িয়ে বললাম, প্লিজ প্রিয়া আমাকে ক্ষমা করে দেও। বলতে বলতে হাটু গেড়ে ওর সামনে বসে পরলাম তারপর ওর হাতটা ধরে আমি আবার বলতে শুরু করলাম। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি আগে বুঝতে পারি নাই, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। প্লিজ তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমার কাছে মনে হচ্ছিল যে, আমি কোন রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করছি এটাই যেন ছবিটার সবচেয়ে বেশী রোমান্টিক মুহুর্ত। আমি প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ওর উত্তরের অপেক্ষা করছি, আর ইয়াসমিন তো হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর প্রিয়া ওর হাতটা টেনে নিতে নিতে বললো, আগে তুমি দাড়াও, ময়লার মধ্যে বসেছো কেন? লজ্জা টজ্জা বলতে কিছু নেই তোমার? আমি দাড়ালাম। ইয়াসমিন এখনও চুপ করে আছে। মন হচ্ছে রোমান্টিক ছবির প্রচুর ভক্ত, নীরব দর্শকের মত দেখছে আর ভাবছে ছবির বাকী অংশ কি হবে?…

অনেক্ষণ যাবত আমাদের কেউ কোন কথা বললাম না। সবাই শুনার অপেক্ষায় আছি। মনে হচ্ছে, আমাদের কারও যেন পরবর্তী উরধষড়মঁব টা মনে নেই। কোন উরধষড়মঁব টা দেওয়া দরকার এখানে?

প্রিয়া চুপচাপ হাটতে শুরু করলো। আমি আর ইয়াসমিন ও হাটছি ওর সাথে সাথে। নীরবতা ভেঙ্গে ইয়াসমিন বলে উঠলো;
: ছবি শেষ নাকি?
প্রিয়া উত্তর দিতে শুরু করলো: না, বিরতির পর বাকি অংশ দেখানো হবে। অপেক্ষা কর।
ইয়াসমিন আবার বললো: কিসের বিরতি, প্রিয়া উত্তর দিল: নীরবতার বিরতি।

হাটতে হাটতে র‌্যাঙস্ ভবনের সামনে চলে এলাম। প্রিয়া রিকশার জন্য এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, আমি সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম: আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিলে না তো?
তুমি কি আমাকে ভালবাসো না?
একটু হেসে একটু ঢং করে কথায় একটু রং দিয়ে বলতে শুরু করলো: আমার কাছে কোন উত্তর নেই আর আমি তো তোমার ভালবাসা আগেই পেয়েছি। বলতে বলতে রিকশায় উঠে গেলো, যাওয়ার সময় বলে গেলো; তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।

রাত ১২:৩০ মিনিট, ওর কথা ভাবছি, ওকি করছে? ওকি আমার কথা ভাবছে? আমাকে ও কতটা ভালবাসে? ওকি আমাকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে? আজ কে ওর চোখ দেখে, ওর হাত ধরে আমি বুঝতে পেরেছি যে ও আমাকে অনেক ভালবাসে কিন্তু ও মুখে বলতে চাচ্ছে না কেন? ধ্যাত, আজে বাজে চিন্তা মাথার মধ্যে ঢুকছে বার বার। না পারছি পড়তে না পারছি ঘুমাতে খালি ওর কথা ভাবছি। যাই করি না কেন ওর কথা ভুলতে পারছি না, প্রিয়ার ও কি আমার মত অবস্থা । হঠাৎ মোবাইলটা আমার গভীর চিন্তার ব্যাঘাত ঘটাল, মিউ মিউ….. মিউ মিউ মোবাইলের রিং বাজছে।

ফোনটা রিসিভ করলাম যেহেতু আনকমন নাম্বার তাই প্রথমেই রিসিভ করে; আচ্ছালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
ওপাশ থেকে একটি মেয়ে কন্ঠ ফিস ফিস করে উত্তর দিলো,
: হ্যাঁ আমি,
: আমি, ঠিক চিনলাম না। কে বলছেন?
: আমি প্রিয়া।
: ও প্রিয়া, তুমি আমাকে কল করবে আমি ভাবতেও পারি নাই।
: কি ঘুমাও না কেন?
: তোমার কথা ভাবছিলাম তো তাই আর তুমি?
: আমি পড়ছিলাম।
: এতো রাত পর্যন্ত পড়?
: হ্যাঁ। কেন তবে কি আমি তোমার কথা ভাবব নাকি?
: ভাবতেও তো পার। তাই না?
: ঠ্যাকা পড়েছে, আমার রাত জেগে তোমার কথা ভাবতে হবে। আমি কি তোমার মত রোমিও নাকি?
: না তুমি রোমিও হবে কেন তুমি তো জুলি তাই না?
: চুপ কর। যে না আমার রোমিও তার আবার জুলি?
: থাক এসব কথা, আচ্ছা তুমি আমার প্রশ্নের উত্তরটা তো দিলে না?
: আমি তোমাকে ভালবাসতে পারি একটা শর্তে,
: একটা কেন হাজার শর্ত মানতে রাজি আছি।
: শর্তটা হচ্ছে তুমি আমাকে যতটা কাঁদিয়েছো ততোটা কাঁদতে হবে, পারবে?
: তুমি বললে মরতেও পারব আর কাঁদতে পারবো না কি যে বল তুমি,
: আচ্ছা বাই বাই কালকে দেখা হবে।
: তাড়াতাড়ি আসবে দয়া করে।
: তুমি ১১:৩০ এর মধ্যে উপস্থিত থাকবে বলতে বলতে লাইন টা কেটে দিলো।

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত একটা পেরিয়ে গেছে। টেবিল থেকে উঠে বাথরুমে যাবো এরমধ্যে আব্বু ডাক দিয়ে বললো; কি রে এতো রাতে এখনও তুই ঘুমাসনি?
: না আসলে কালকে পরীক্ষা তো তাই, পড়ছিলাম একটু।
: তাই কি পরীক্ষা?
: পদার্থ
: পদার্থ পরীক্ষা?
: হ্যাঁ
: ভাল করে পড়ছিস তো, চৎবঢ়ধৎধঃরড়হ কেমন?
: ৫০% তো দিয়েই দিয়েছি।
: মানে?
: কঠিন চৎবঢ়ধৎধঃরড়হ ১০০% বলতে গেলে ৫০% পরীক্ষা দিয়েই দিয়েছি। বাকি আর ৫০% আছে, দিলেই বিয়েতে পাস।
: মানে কি?
: মানে বি.এ সরি এইচ. এস.সি এর ৫০% চৎবঢ়ধৎধঃরড়হ পড়সঢ়ষবঃব বাকি ১০০% হলেই পরীক্ষায় পাশ হয়ে যাবো।
আরও কিছুক্ষণ ওল্টা পাল্টা বকবক করে এড় ঃড় ংষববঢ় করলাম।

অনেকদিন পর রাতে একটু শান্তির ঘুম হয়েছে, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গধঃয টা করে নিলাম তারপর আরও কিছুক্ষণ পড়ার পর একেবারে ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বেলায়েত স্যারের কাছে চলে আসলাম। পড়া শেষ করে কলেজে পথে … করলাম পথেই রহিমের সাথে দেখা, খুব ফিট ফাট অবস্থা, আমি জিজ্ঞাসা করলাম; কি খবর?
: ভাল
: রিকশা লই নাই আজকে, প্রেমিকার লগে রমনা পার্কে যামু, আমারে কেমন লাগতাছে ভাই?
: খুব হ্যাঁন্ডসাম।
: মানে?
: খুব সুন্দর।
: ভাই কাইলকা দেখা হইবো, আমি যাইগা। বলেই দৌড়ের গতিতে হাটতে হাটতে চলে গেলো।

আমি একটা রিকশা নিয়ে কলেজে চলে এলাম। প্রিয়া আমার আগে এসে হাজির হয়েছে। গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। আসতে না আসতে প্রিয়ার প্রশ্ন শুরু হয়ে গেছে কি ব্যাপার এতো দেরী কেন?
: স্যারের কাছে গিয়েছিলাম না।
: আমার সাথে প্রেম করলে প্রতিদিন আমার আগে আসতে হবে।
: জ্বি ম্যাডাম, অবশ্যই আসবো।
তারপর আরও কিছু কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়ে ক্লাসে চলে গেলাম। তারপর আবার ক্লাশ শেষে একসাথে হাটতে হাটতে চলে আসি। দেখতে দেখতে এভাবে অনেকগুলো দিন পার হয়ে গেলো।

 

.: কিছু পাতা । মেহেদী মেনাফা :.

একটি ভালবাসার গল্প

edited

“কিছু পাতা”উপন্যাসটি আমার জীবনের কিছু সত্য এবং কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে লেখা। এটাই আমার জীবনের প্রথম লেখা উপন্যাস, তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

(if you can’t read cause of Bangla text, you can try image format at this link http://www.black-iz.com/vinnokobor/kisupata.html) (Also you can download this book from this link @ http://www.black-iz.com/kp/kisupata.doc)

Muhammad Mehedi Menafa at facebook : www.facebook.com/muhammadmehedimenafa

 

Related posts